মেহেরপুরের গাংনীতে ইটভাটার মালিকরা সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে লাইসেন্সবিহীন ৪৩ টি ইটভাটা গড়ে তুলেছেন। তাতে প্রতিদিন ২০ হাজার মণ গাছের খড়ি পড়ে। ফলে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল।
এসব ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। কয়লার দাম বাড়তি থাকায় স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দেদারছে গাছ কেটে তার খড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। ফলে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে ফসলি জমি, বৃক্ষ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। শুধু তাই নয়, শ্বাস কষ্ট, হাপানিসহ নানান মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে এ এলাকার মানুষ।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩তে বলা হয়, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা অর্থাৎ জিগজ্যাগ ক্লিন, হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন, ভার্টিক্যাল শিফট ক্লিন, টানেল ক্লিন বা অনুরোপ উন্নততর কোনো প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপন করতে হবে।
তাছাড়া আবাসিক, জনবসতি, সংরক্ষিত এলাকার বনভূমি ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা করা যাবে না। এছাড়া সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বে করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বা লাইসেন্স না নিয়ে ইটভাটা চালু করা যাবে না। আর এ আইন অমান্য করলে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
আর এসব ইটভাটা তদারকি করার জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বন বিভাগ, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু তাদের রহস্যজনক নীরবতার কারণে গাংনীর ৪৩টি ইটভাটা মালিক এসব আইনের তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে দেদারছে তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসক ও বন বিভাগ থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টর ম্যানেজ করেই ভাটা পরিচালনা করা হয়ে থাকে বলে জানা যায়। আর এসব ম্যানেজ করে থাকেন উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির নেতারা।
গাংনী ইটভাটা মালিক সমিতির ভার প্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক বিশ্বাস ব্রিকসের মালিক চঞ্চল বিশ্বাস জানান, গাংনীতে ৪৩ টি ইটভাটা রয়েছে। কোনটারই লাইসেন্স নেই। ২০১৩ সালের পর থেকে সরকার লাইসেন্স দিচ্ছেনা। তাই সবদিক ম্যানেজ করেই আগে যেভাবে চালানো হতো এ বছরও সেভাবেই ভাটাগুলো পারিচালিত হয়ে আসছে।
এদিকে এ এলাকার ৬টি পরিবেশ বান্ধব হাওয়া ভাটা রয়েছে। হাওয়া ভাটার এক মালিক জয়নাল জানান, ২০১৭-১৮ সালে পরিবেশ ছাড়পত্র নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। হাওয়া ভাটায় খরচ বেশি হওয়ায় ফিট ভাটা ব্যবসার সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা প্রীতম সাহা জানান, যে সমস্ত ইটভাটা আইন উপেক্ষা করে তাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে সেসব প্রিতষ্ঠানে আইনগত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে